কিভাবে পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলো খুব সহজে মনে রাখবেন?
একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা, আপনাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ টপিক নিয়ে আজকে আলোচনা করতে যাচ্ছি। কিভাবে সহজে পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলো সহজে মনে রাখা যায় তা নিয়ে বেশ কিছু টিপস ও টেকনিক আপনাদের দেখবো। নবম-দশম শ্রেণির পদার্থতে খুব একটা সূত্র নেই, তাই মনে রাখা খুব কঠিন হয় না, কিন্তু ইন্টারের ফিজিক্স ২ পেপারে মোট সূত্রের পরিমাণ অনেক। আর এক্সামে একটা বিশাল মার্কস আগ এইসব সূত্রের প্রয়োগ থেকে। তাই সূত্রগুলো জানা থাকলে ভালো ফলাফল করা সম্ভব।
সূত্রের সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি জানা
একটি সূত্র মনে রাখা ও প্রয়োগের আগে আপনার ঐ বিষয়ে জেনারেল একটা আইডিয়া থাকা লাগবে। উদাহরণ স্বরূপ, আপনি নিচের সূত্রটি মনে রাখতে চাচ্ছেন$$L = L_0 \sqrt{1 - \frac{v^2}{c^2}}$$
এখন এটি কিসের সূত্র বা এর কাজ কি?, এর চিহ্নগুলো দ্বারা কি বুজাচ্ছে?, এর প্রয়োগ, এবং প্রয়োগের ফলে প্রাপ্ত ফলাফল কেমন হয়? এসব বিষয় জানা থাকলে সূত্রটি মনে রাখা ও অংকে ব্যবহার করা আপনার সহজ হবে। উপরের সূত্রটি দৈর্ঘ্যের আপেক্ষিকতা বিষয়ক সূত্র যা দৈর্ঘ্য সংকোচন এর সূত্র হিসেবেও পরিচিত, এটির সাহায্যে তীব্র বেগে ভ্রমনরত কোনো বস্তুর নির্দিষ্ট একটি কাঠামোর সাপেক্ষে আপেক্ষিক দৈর্ঘ্য বের করা যায়। এখানে $$L_0$$ = স্থির অবস্থায় বস্তুর দৈর্ঘ্য, $$L$$ = চলন্ত অবস্থায় প্রসঙ্গ কাঠামের সাপেক্ষে দৈর্ঘ্য, $$c$$ = আলোর বেগ, $$v$$ = বস্তুর বেগ নির্দেশ করছে। আপনারা সূত্রটিকে এভাবে নোট করে রাখতে পারেন-সূত্র | ব্যবহৃত চিহ্ন |
---|---|
দৈর্ঘ্য সংকোচন $$L = L_0 \sqrt{1 - \frac{v^2}{c^2}}$$ প্রসঙ্গ কাঠামোর সাপেক্ষে চলন্ত বস্তুর দৈর্ঘ্য নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয়। |
|
সূত্র প্রতিপাদন করা
পদার্থবিজ্ঞানের অনেক সূত্রই অন্য আরেক সূত্রের রূপ বা অন্য রিলেটেড কয়েকটি সূত্র হতে এসেছে। কাজেই এই সূত্রগুলো কয়েকবার প্রতিপাদন করলে তা মনেরাখা সহজ হয়। যেমন-নিউটনের ২য় সূত্র হতে:
$$ F = ma $$ ____(১)
কেন্দ্রমুখী বলের ত্বরণ:
$$ a = \frac{v^2}{r} $$ [$$r$$= বৃত্তাকার পথের ব্যাসার্ধ]
$$a$$ এর মান (১) নং এ বসিয়ে:
$$ F = m \cdot \frac{v^2}{r} $$
সুতরাং কেন্দ্রমুখী বল:
$$ F = \frac{mv^2}{r} $$ ____(২)
বা, $$ F = mw^2r $$ __(৩) [যেহেতু, কৌণিক বেগ ω = $$\frac{v}{r}$$]
অধ্যায় ভিত্তিক সূত্র নোট করা
একটি খাতায় অধ্যায় ভিত্তিক সূত্রগুলো নোট করে নিতে পারেন। এছাড়া বাজারে বেশ কিছু সাপ্লিমেন্টেও অধ্যায় ভিত্তিক সূত্রগুলো পাওয়া যায়। সূত্র নোট করার সময় পাশে তাতে ব্যবহৃত চিহ্নগুলো এর অর্থ লিখবেন। উপরে এক জায়গায় আমি এটি দেখিয়েছি। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ সূত্রগুলো স্টার, হ্যাশ বা আপনার পছন্দমাফিক চিহ্নিত করে রাখুন। পুরানো প্রশ্ন এনালাইসিস করলে বুঝতে পারবেন কোন সূত্রগুলো বেশি কাজে আসে। এছাড়া ক্লাসেও শিক্ষকরা সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ সূত্রগুলো মার্ক করে দেয়।প্রবলেম সলভিং
সূত্র প্রয়োগ করে প্রবলেম সলভ করতে হবে। একই সূত্রের অংক কয়েকবার করে প্র্যাকটিস করতে হবে। প্রথম প্রথম নোট করা সূত্রগুলো দেখে সাহায্য নিতে পারেন। পরবর্তীতে নোটের সূত্র না দেখে নিজে নিজে প্র্যাকটিস করতে হবে। এসময় সূত্রগুলো একটি রাফ পেজে বারবার লিখবেন।রিভিশন দেওয়া
আপনি যত ভালো করেই সূত্র মুখাস্ত করেন না কেন, নিয়মিত রিভিশন না দিলে বেশিরভাগ সূত্রই ভুলে যাবেন। এক্ষেত্রে ১/৭/৩০ বা এই টাইপের রিভিশন টেকনিক ফলো করতে পারেন, যা খুবই উপযোগী। কোনো একটি পড়া শেষে করে ১দিন, ৭দিন, ও ৩০দিন পর রিভিশন করার মাধ্যমে অনেকদিন পড়াটি মনে রাখা সম্ভব।অনান্য টেকনিক
এছাড়া আপনার নিজস্ব কোনো টেকনিক এডাপ্ট করতে পারেন। যেমন, হাটতে হাটতে সূত্রগুলো পড়া, জোরে জোরে পড়া, ১৫-২০ মিনিট পড়ে আবার ১০ মিনিট গ্যাপ দেওয়া, একসাথে অনেকগুলো সূত্র মুখাস্ত করার চেষ্টা করার বদলে ২-৫টি করে সূত্র মুখাস্ত করা ইত্যাদি পদ্ধতি অবলম্বন করে আপনি পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলো মনে রাখতে পারবেন।অনেকে আবার সূত্রগুলো ছন্দময় বাক্য আকারে মুখাস্ত করেন, কিংবা নিমোনিক্স (Mnemonics) টেকনিক ফলো করে থাকেন। যদিও আমি ব্যক্তিগতভাবে এর কোনোটিই ব্যবহার করি না।