জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষার নিয়ম (অনার্স+মাস্টার্স+ডিগ্রি)
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ও মাস্টার্সের ও ডিগ্রীর শিক্ষার্থীদের জন্য ইমপ্রুভ দেওয়ার নিয়ম (Degree+Honours+Masters Improvment Exam) নিয়ে বিস্তারিত জানাতে আজকের এই পোষ্ট। ইমপ্রুভমেন্ট দেওয়ার নিয়ম ও শর্ত, সুবিধা, অসুবিধা ও আপনাদের জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সাজানো হয়েছে পোষ্টটি। চলুন দেখে নেওয়া যাক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স, মাস্টার্স, ডিগ্রি শিক্ষার্থীদের ইমপ্রুভ পরীক্ষা দেওয়ার নিয়ম।
ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষার নিয়ম
ডিগ্রী, অনার্স ও মাস্টার্সে ইমপ্রুভমেন্ট বা মানোন্নয়ন পরীক্ষা শুধু সেসব সাবজেক্টে দিতে পারবেন যেগুলোতে আপনার C গ্রেড বা এর নিচে রয়েছে। অর্থাৎ C+ কিংবা তার চেয়ে বেশি গ্রেড রয়েছে এমন সাবজেক্টে আপনারা মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিতে পারবেন না।
C ও D গ্রেডের মানোন্নয়নঃ কোন বিষয়ে C এবং D গ্রেড পেয়ে পাশ করলে, মানোন্নয়ন পরীক্ষা না দিলে কোন সমস্যা হবে না, দিলে আপনার গড় পয়েন্ট বাড়তে পারে। তাই প্রতিবছর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্সে অনেক ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
আপনি যদি মানোন্নয়ন করতে চান তবে পরের বার উক্ত বিষয়ে ইমপ্রুভ দেওয়ার জন্য ফরম ফিলআপ করতে হবে। প্রথম বার C/D গ্রেড প্রাপ্ত বিষয়ে পরবর্তীবার ফরমপূরন না করলে এর পরে পরবর্তীতে ঐ বিষয়ে আর ইম্প্রুভমেন্ট দেয় যায় না। এছাড়া, মানোন্নয়নের জন্য আপনারা একটি মাত্র সুযোগই পাবেন। তবে, ১ম বার C/D গ্রেড প্রাপ্ত বিষয়ে পরবর্তীবার ফরমপূরন করেও পরীক্ষায় অংশগ্রহন না করলে কিংবা অংশগ্রহণ করে ফেল করলে ঐ বিষয়ে পরবর্তীবার আবার ইম্প্রুভমেন্ট দেয় যায়।
F গ্রেড বা ফেলঃকোন বিষয়ের পরিক্ষায় অনুপস্থিত থাকলে তা F গ্রেড বা ফেল হিসাবে বিবেচ্য। এছাড়া ১০০ মার্কের পরীক্ষায় মোট ৪০ মার্কের নিচে পেলেও ফেল বলে বিবেচ্য। F গ্রেড পেলে বা অকৃতকার্য হলে পরবর্তী বার তা পুনঃরায় পরীক্ষা দিয়ে কৃতকার্য হতে হবে। রেজিষ্ট্রেশন কার্ডের মেয়াদ থাকাকালীন আপনি যতবার পাশ করবেন না ততবার উক্ত পরীক্ষা দিতে পারবেন। আগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স রেজিষ্ট্রশন কার্ড ৬ বছর মেয়াদী থাকলেও বর্তমানে ১ বছর বাড়িয়ে ৭ বছর করা হয়েছে। ডিগ্রীর রেজিষ্ট্রেশন কার্ডের মেয়াদ ৬ বছর আর মাষ্টার্সের রেজিষ্টশন কার্ডের মেয়াদ ৩ বছর। ডিগ্রী, অনার্স কোর্স শেষ করার জন্য ১ম বর্ষ থেকে ৪র্থ বর্ষ পর্যন্ত কোন বিষয়ে F গ্রেড রাখা যাবে না। F গ্রেড প্রাপ্ত বিষয়ে পুনঃরায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করলে পরবর্তীতে আর ইম্প্রুভমেন্ট দেয়া যাবে না, এমনকি C বা D গ্রেড পেলেও আর ইম্প্রুভমেন্ট দেয়া যাবে না।
ডিগ্রির ক্ষেত্রে ৩য় বর্ষের রেজাল্ট সহ মোট ২.২৫ (3rd Class) এর কম পেয়ে থাকে তাহলে পূর্বে শুধু যেসব বিষয়ে মানউন্নয়ে অংশগ্রহন করেন নাই ৩য় বর্ষের সর্বোচ্চ এমন ২টি বিষয়ের মান উন্নয়নের সুযোগ পাবে শিক্ষার্থী।
মানোন্নয়ন পরীক্ষার ফলাফল
মানোন্নয়ন দিয়ে কোনো বিষয়ে পূর্বের গ্রেড অপেক্ষা কম পেলে, সেক্ষেত্রে পূর্বের উচ্চতর গ্রেডটি গ্রহন করা হবে। আগে ইম্প্রুভমেন্ট দেয়া বিষয়ে সর্বোচ্চ B+ গ্রেডের সীমার নিয়ম রাখলেও তা এখন কার্যকর নয়, তাই এখন যা পাবেন তাই দিয়ে দেয়। তবে ইমপ্রুভমেন্ট এক্সামের ক্ষেত্রে কলেজ থেকে ইনকোর্স মার্ক পাঠানো হয় না, মানে আপনি প্রথমবার যা ইনকোর্সে পেয়েছেন তাই পাবেন। কোনো একটি পত্রে পাশ করতে খাতায় ও ইনকোর্সে মিলিয়ে ৪০% নম্বর পেতে হবে। কোনো বিষয়ের একাধিক পত্র থাকলেও সেগুলোতে আলাদা আলাদা পাশ করতে হবে।
ডিগ্রির ক্ষেত্রে কোন বিষয়ে (ফেল) F গ্রেড থাকলে তাকে ডিগ্রীর সনদ দেয় হবে না, অকৃতকার্য বলে গন্য হবে। তবে, অনার্সের ক্ষেত্রে মোট CGPA 2.00 থাকা সাপেক্ষে, কোন বিষয়ে (ফেল) F গ্রেড থাকলে তাকে ডিগ্রী (পাস) সনদ দেয় হবে।
ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষার সুবিধা ও অসুবিধা
ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষা দিয়ে আপনি আপনার জিপিএ ও সিজিপিএ বাড়াতে পারবেন। তবে এর অসুবিধাও আছে। ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষার প্রিপারেশন নিতে গিয়ে আপনার বর্তমান বর্ষের পরীক্ষা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এছাড়া ৪র্থ বর্ষে এসে কোনো সাবজেক্টে ইমপ্রুভ দেওয়ার প্রয়োজন পড়লে আপনার ১টি বছর নষ্ট হবে।
ইমপ্রুভ পরীক্ষা নিয়ে জিজ্ঞাসা
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমপ্রুভ এক্সাম নিয়ে শিক্ষার্থীদের মনে অনেক প্রশ্ন জাগে, সেগুলো হতে কমন কিছু প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করলাম। তবে তার আগে উপরের পোষ্টটি ভালোভাবে একবার পড়ে নিন, এতে মোটামুটি সব প্রশ্নের উত্তর পাবেন। এবং এর বাহিরে কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে জানাবেন।ইমপ্রুভের ফরম ফিলআপ কত টাকা?
ফরম ফিলআপের খরচ কলেজ টু কলেজ ভ্যারি করে তবে সাধারণত ১০০০-১২০০ টাকার মতো বেসিক একটা এমাউন্ট থাকে আর পার সাবজেক্ট ২০০-৩০০ টাকার মতো করে যোগ হয়। অর্থাৎ ১ সাবজেক্ট ইমপ্রুভ ১৩০০-১৫০০ টাকার মতো পড়তে পারে, ২ সাবজেক্ট ১৫০০-১৮০০ এইভাবে বাড়ে।
ইমপ্রুভ পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে কী লাগে?
অনালাইনে ফরম ফিলআপ করে যে কপি ডাউনলোড করেছেন তা, ১/২ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি, আগের এডমিট কার্ডের কপি, রেজিষ্ট্রশন কার্ডের কপি লাগবে। এবং এই পুরো সেটের আরেকটা ফটোকপি সাথে রাবেন। তবে কলেজ অনুযায়ী এটি ভ্যারি করতে পারে। তাই ভালো হয় ফি আর কাগজের ব্যাপারে ডিপার্টমেন্টের অফিস সহকারীকে কল করে জিজ্ঞাস করে নিলে।
যদি C গ্রেড পাওয়া সাবজেক্টে ইমপ্রুভ দিয়ে ফেল করি বা অনুপস্থিত থাকি তাহলে কি কোনে সমস্যা হবে?
C গ্রেড পাওয়া সাবজেক্ট এ ফেল করলে বা অনুপস্থিত থাকলে পরবর্তী বছর আবার ফরম পূরণ করার সুযোগ পাবেন। আর পরবর্তী বছর আবার ফরম ফিলআপ না করতে চাইলে আগের C গ্রেড রয়ে যাবে।
যদি C গ্রেড পাওয়া সাবজেক্টে ইমপ্রুভ দিয়ে D পাই তাহলে চুড়ান্ত ফল কি হবে?
C গ্রেড হবে, ইমপ্রুভমেন্ট এক্সামের রেজাল্ট সবসময় বেশি গ্রেড যেটা থাকে সেটাই হয়।
একটা সাবজেক্টে সর্বোচ্চ কত বার ইম্প্রুভ দেওয়া যায়?
১ বারই ইমপ্রুভ দিতে পারবেন। যদি ইমপ্রুভ দিয়ে আবারও C বা D গ্রেড পান, তবেও না।
একসাথে কয় সাবজেক্টে ইমপ্রুভ দেওয়া যায়?
অনার্স প্রথম হতে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত যেকোনো বর্ষে সর্বোচ্চ ২ বিষয়ে ইমপ্রুভের জন্য ফরম ফিলআপ করতে পারবেন। তবে এতে ফেল করা সাবজেক্ট গণনা হবে না।
C/D গ্রেড পাওয়া সাবজেক্টে একবার ইম্প্রুভ দিয়ে যদি আবার C/D পাই তাহলে কি আবারো ইমপ্রুভ দিতে পারবো ওই সাবজেক্টে?
না, পারবেন না। আগের প্রশ্নেই এর উত্তর আছে। ইমপ্রুভ পরীক্ষায় শুধু মাত্র ফেল বা অনুপস্থিত থাকলে আবার ইমপ্রুভ এক্সাম দিতে পারবেন।
ইমপ্রুভ পরীক্ষায় ফেল করলে কি করবেন?
ইমপ্রুভ পরীক্ষায় ফেল করলে পুনঃরায় ইমপ্রুভ পরীক্ষা দিতে পারবেন। তবে চেষ্টা করবেন তৃতীয় বর্ষের মধ্যে সব বিষয়ের ইমপ্রুভ শেষ করে ফেলার।
আশাকরি পোষ্টটিতে আপনাদের ইমপ্রুভমেন্ট এক্সাম দেওয়া সংক্রান্ত সব প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন, তারপরও কিছু জানার থাকলে কমেন্টে জানান, চেষ্টা করবো উত্তর দেওয়ার।